চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘাত ও রক্তক্ষয়ী সহিংসতার ঘটনায় তদন্তে নেমেছে দলটি।তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজীজুল বারী হেলাল গতকাল সোমবার দুপুরে প্রথমে রাউজানে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন।রাউজান উপজেলা অডিটোরিয়ামে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী বিএনপি নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎকার নেন তদন্ত কমিটি সদস্যবৃন্দ। তদন্ত কমিটিকে সাক্ষাৎকার বা ঘটনার বর্ণনা দেন আবু জাফর চৌধুরী,ফিরোজ মেম্বার,সৈয়দ মঞ্জুরুল হক, হাবিব উল্লাহ মাস্টার, সাবের সুলতান কাজল,আনিসুজ্জামান সোহেল, মো. আলী সুমন, লিটন মহাজন,তসলিম উদ্দিন, শাহাদাত মির্জা,নিজাম উদ্দিন চৌধুরী,আশেকুর রহমান ফয়েজসহ ১৮-২০জন। উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সাবের সুলতান কাজল বলেন, আমরা প্রকৃত ঘটনা উত্থাপন করেছি, আমরা আশাবাদি ন্যায় বিচার পাবো। আমাদের উপর হামলা করে আমাদের নেতার বিরুদ্ধে ভুল গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে অপ্রচার করা হয়েছিল। অথচ আমাদের নেতা একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ, তিনি রাউজানবাসীর শান্তি নিশ্চিতকল্পে কাজ করছেন। জনপ্রিয়তায় ইশ্বার্নিত হয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন। অপর দিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কার্যালয় নছিমন ভবনে গোলাম আকবর খোন্দকার অনুসারী বিএনপি নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত হওয়া বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার ঢাকায় থাকায় তদন্ত কমিটিকে সাক্ষাত দিতে পারেননি বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তবে তাঁর অনুসারী উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক জিএম মোরশেদ বলেন, সোমাবর বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর বিএনপির কার্যালয়ে তদন্ত কমিটির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে আমাদের কাছ থেকে সাক্ষাৎকার নেন। আমাদের প্রায় ৩০০ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এরমধ্যে জসিম উদ্দিন চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, আবু মোহাম্মদ, ইফতেখার উদ্দিন খান, জিএম মোরশেদ, এইচ এম নুরুল হুদা, ফোরকান সিকদার, মাহাবুবুল আলম, সিরাজ উদ দৌলা চেয়ারম্যান, মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ ১২-১৫ জনের সাক্ষাৎকার বা ঘটনার বর্ণনা শুনেন। এর আগে দুপুুরে রাউজানে ঘটনার বর্ণনা শুনার পর দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য আজীজুল বারী হেলাল বলেন, রাউজানের বিএনপি ঐকবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনকে মোকাবেলা করতে হবে। আগামী নির্বাচন কঠিন হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচন না করে পেছনের দরজা দিয়ে বা নির্বাচনকে অনিশ্চিয়তা করে তুলবার অপচেষ্টা করছে। বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেব আমরা যারা বিএনপি করি দেশে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে হবে, নির্বাচনী আবহাওয়া তৈরি করতে হবে। শীগগরই দেখবেন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে। সে নির্বাচনকে মোকাবেলা করবার জন্য আপনাদেরকে আমাদের নেতা তারেক রহমান প্রতিদিন যে বক্তব্যগুলো দেয় নতুন দিনের রাজনীতি, সেই নতুন রাজনীতি শুরু করতে হবে। আওয়ামীলীগের স্টাইলে রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না। সে রাজনীতি পরাজিত হয়েছে।’ আজীজুল বারী হেলালের সঙ্গে ছিলেন সোলাইমান মঞ্জু, সাখাওয়াত হোসেন, আহমদুল রাসেল, নেসারুল হক, সেলিম উদ্দিন প্রমুখ। তদন্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ না খুললেও যথাসময়ে দলের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করার কথা জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার অনুসারীদের মধ্যে হামলা, পাল্টা হামলা, গোলাগুলি, সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা সংগঠিত হয়। এতে গোলাম আকবর খোন্দকারসহ দুপক্ষের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এছাড়া পুলিশের গাড়ি এবং গোলাম আকবর খোন্দকারের গাড়ি ভাঙচুর এবং তিনটি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ও গিয়াস কাদের চৌধুরী পদ স্থগিতদাশে প্রদানের বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে আগামী সাত দিনের মধ্যে দলীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে একটি লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। চিঠিতে বলা হয়, ‘বিগত কয়েক মাস ধরে রাউজান উপজেলা বিএনপিতে অপ্রীতিকর ঘটনা, হানাহানি ও রক্তাক্ত সহিংসতার বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে লিখিত প্রতিবেদন প্রদান করার জন্য আপনাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করছি। স্থগিতাদেশ প্রাপ্তি পর সেটিকে ‘প্রেমপত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন বিএনপির সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সময় প্রমাণ করবে দলের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কী না।’ বুধবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকায় নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রবিবার গিয়াস কাদের চৌধুরীর দলীয় পদ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহৎ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন।
প্রধান সম্পাদক প্রদীপ শীল - ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দীন।