জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে ভালো নেই হালদার বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। হালদায় নদীতে সাগরের লবণাক্ততা পানি প্রবেশ করায় ডিম ছাড়ার মৌসুমে মা মাছের প্রজনন হুমকীর মূখে বলে মনে করছেন হালদা বিশেষজ্ঞরা। একই সাথে বন্ধ হয়নি যান্ত্রিক নৌ চলাচল। প্রতিদিন সরকারী নিষেধাজ্ঞ অমান্য করে হালদা থেকে বালু উত্তোলন অব্যহত রেখেছে বালু খেকোর সেন্ডিকেট। জানা যায়, বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী মেজর কার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। প্রতি বছর প্রজনন মৌসুমে (এপ্রিল-জুন) অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি হয়ে পাহাড়ী ঢল নামে তখন মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়েন। এছাড়া বৃষ্টির পানিতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি, পানির তাপমাত্রা (২৭-২৯) ডিগ্রী সেলসিয়াস ও বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের মিত্রস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার প্রাকৃতিক অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হলেই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে। স্থানীয় পাঁচ শতাধিক ডিম সংগ্রহকারী এসব ডিম সংগ্রহ করে মাটির তৈরি কূয়া বা হ্যাচারীতে ফুটিয়ে উন্নত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন পোনা উৎপাদন করে থাকেন। হালদা গবেষক চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড.মো. শফিকুল ইসলাম জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড যেমন:- দূষণ, জাল, বড়শি ও বিষ দিয়ে অবৈধ মৎস্য শিকার, অবৈধ বালু উত্তোলন, চরকাঁটা, হালদার উজানে ভুজপুর ও হারুয়ালছড়ি রাবার ড্যাম, ধুরুং খালের উপর কনক্রিট ড্যাম, হালদা ও এর বিভিন্ন শাখা খাল সমুহ পলি জমে ভরাট ইত্যাদি কারণে হালদার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তথা জলজ পরিবেশ হুমকির স¤মুখীন। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে হালদার মৎস্য সম্পদের উপর। এর প্রভাবে বিগত দুই বছর হালদা থেকে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমেছে। বর্তমানে হালদা নদীতে চলছে মেজর কার্প জাতীয় মাছের ভরা প্রজনন মৌসুম। পরিবেশ অনুকুলে না থাকায় এপ্রিল মাসের দুটি জো এবং মে মাসের পূর্ণিমার জো অর্থাৎ তৃতীয় জো অতিক্রম হলেও এখনো কিন্তু দেখা মিলছেনা স্থানীয়ভাবে শ্বেতস্বর্ণ হিসেবে পরিচিত কার্পজাতীয় মাছের কাঙ্ক্ষিত ডিম। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বেড়েছে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা এর ফলে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কর্ণফূলী নদীতে কমেছে পানি প্রবাহ। এর প্রভাবে জোয়ার সময় কর্ণফূলী নদীর লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে হালদায়। এই লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে হালদার কার্পজাতীয় মাছের বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডে। বর্তমানে হালদার বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডের পানিতে স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক লবণাক্ততার উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে।
Leave a Reply