চট্টগ্রামের রাউজানে পরিবেশের মামলা-জরিমানা দিয়েও থামানো যাচ্ছে না পাহাড়-টিলা ও কৃষি জমির মাটি কাটা।
নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়-টিলার লাল মাটি ও কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল)।বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাটি খেকো সিন্ডিকেট সদস্যরা।সিন্ডিকেট করে রাতের অন্ধকারে যে যেভাবেই পারছে খননযন্ত্র এস্কেভেটর দিয়ে পাহাড়-টিলা ও কৃষি জমির মাটি কেটে ড্রাম ট্রাক যোগে সরাবরাহ করা হচ্ছে ভরাট কাজে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ জনপদ রাস্তা-ঘাট।এখন রাউজান উপজেলার জুড়ে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব।পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একাধিক চক্র ভেকু দিয়ে রাতে মাটি কেটে বিক্রি করলেও কোনো আইনি পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে দু”একটি স্থানে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করলেও তা আমলে নিচ্ছেন না মাটি খেকো সিন্ডিকেট সদস্যরা।এসব অভিযান আর জরিমানা তাদের গায়ে মাখছে না।প্রশাসনের নজরদারি এড়াতে মাটি খেকো সিন্ডিকেটরা রাতের সময়কে উত্তম সময় হিসাবে বেছে নিয়েছে।রাউজান উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাউজান পৌর নয় নম্বর ওয়ার্ডের আলীখীল,দাওয়াত খোলা, হলদিয়া বিল, ডাবুয়া ইউনিয়নের কলমপতি, রাউজান ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কাজী পাড়া, রশিদর পাড়া,পূর্ব রাউজান জুরুলকুল, কদলপুর ইউনিয়নের শমশের নগর, নতুনপাড়া,পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের আঁধার মানিক, হলদিয়া ইউনিয়নের হচ্ছার ঘাট, কাগতিয়া ডোমখালী এলাকায় পরিবেশ আইন অমান্য করে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত এস্কেভেটর দিয়ে পাহাড়-টিলা ও ফসলি জমির টপসয়েল কাটা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিন্ডিকেট করে একাধিক গ্রুপ জমির মালিককে মোটা অংকের টাকা দিয়ে কৃষি জমির ২০-৩০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে বিভিন্ন এলাকায় জমি, ডোবা ও পুকুর ভরাটে সরবরাহ করছে। আর জমির মালিকরা লোভে পড়ে নগদ টাকার আশায় কৃষি জমির মাটি বিক্রি করে দেন। ২০-৩০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে ধীরে ধীরে ফসলি জমি ডোবা বা পুকুরে পরিণত হচ্ছে।স্থানীয়দের অভিযোগ প্রতিবছর রাউজানে যে হারে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। যার কারণে দিন দিন আবাদী জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকি শিকার হচ্ছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বা আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা বিলুপ্ত করা নিষিদ্ধ থাকলেও মাটিখেকো সিন্ডিকেটরা তা মানছে না।গত ৬ নভেম্বর কদলপুর ইউনিয়নে পাহাড় কাটার দায়ে জড়িত মনচুর নামে এক ব্যক্তিকে দুই লাখ টাকার অর্থদণ্ড ও পরিবেশ মামলা হয়েছে।গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে মাটি কাটার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে কদলপুর ইউনিয়নের আশরাফ আলী চৌধুরী হাট প্রকাশ সোমবাইজ্জে হাটে যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন বাচলুকে পায়ে দুটি ও মাথায় গুলি করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। রাউজান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিদুয়ানুল ইসলাম বলেন, রাউজানে পাহাড় টিলা কাটার খবর পেয়ে দু’য়েকটি স্থানে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে।পাহাড় টিলা ও কৃষি জমি কাটার বিষয়ে প্রশাসন অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। অপরাধীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।
Leave a Reply