চট্টগ্রামের রাউজান সরকারি কলেজের দুই প্রভাষক ও এক কম্পিউটার অপারেটরের বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী কার্যকলাপ, অনিয়ম, জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে জড়িত থেকে জামায়াতের কার্র্যক্রমে সম্পৃক্ততার জন্য শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা, কলেজ লাইব্রেরীতে জামায়াতে ইসলাম ও মৌলবাদী পুস্তক রাখার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাউজান সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দুই শিক্ষক ও এক কম্পিউটার অপারেটরকে অপসারণ দাবিতে আন্দোলন করেন। অভিযুক্ত দুই প্রভাষক হলেন রাউজান কলেজের অনার্স বিভাগের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পটিয়ার বাসিন্দা মো. আতিক উল্লাহ চৌধুরী, কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটির) প্রভাষক চকরিয়ার বাসিন্দা এস.এম হাবিব উল্লাহ ও রাউজান কলেজের কম্পিউটার অপারেটর ও রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা মো. এনামুল হক। তারা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে জামায়াতে ইসলামীর এজেন্টা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কক্ষে বসে সরকার বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, নারী শিক্ষার্থীদের কুপ্রস্তাব, জামায়াতি কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার জন্য বাধ্য, কলেজে নানা অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে দুই শিক্ষক ও এক কর্মচারী। তারা একটি সিন্ডিকেট বলয় তৈরি করে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও বিক্ষোভ সমাবেশে গিয়ে তথ্য প্রমাণ পেয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেন রাউজান উপজেলা ছাত্রলীগ, রাউজান কলেজ ছাত্রলীগ। আন্দোলন থেকে দাবি জানানো হয়, দুই প্রভাষকসহ কম্পিউটার অপারেটরকে বহিস্কারের। এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত হয় ক্যাম্পাস। এসময় অবরোদ্ধ হয়ে পড়ে এ তিন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর পেয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ছুটে যান রাউজান কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও রাউজান পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ। তিনি গিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিভৃত করেন। আশ্বাস পেয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন। অভিযুক্ত শিক্ষক আতিক উল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সত্য নয়। আমি এবং আমার পরিবারের কেউ কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নয়। এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফরম পূরণের সময় নিয়ম অনুযায়ী চেহেরা দেখে শিক্ষার্থীদের সনাক্ত করতে হয়, সে হিসেবে আমি এক শিক্ষার্থীর নেকাপ খুলতে বলেছি। এর বাইরে কিছু না। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কক্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ম অনুসারে গত সেপ্টেম্বর মাসে কক্ষটি উদ্বোধন করা হয়েছে। সেখানে ফটোকপির মেশিন থাকায় কাজের জন্য যেতে হয়। এর বাইরে আমার আর কোন সম্পৃক্ততা নেই। অভিযুক্ত আরেক প্রভাষক এস.এম হাবিব উল্লাহ বলেন, আমি একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে প্রায় একযুক কাটিয়ে দিয়েছি। বিক্ষোভের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। রাউজান কলেজ ছাত্রলীগরে সভাপতি জিল্লুর রহমান মাসুদ বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে শিক্ষক ও কম্পিউটার অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ পেয়ে আমরা একত্মতা ঘোষণা করি। আমরা যেহেতু ছাত্র রাজনীতি করি, সেহেতু সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়েছি। রাউজান সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিম নাওয়াজ চৌধুরীর কাছ থেকে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। আন্দোলনের বিষয়টি তিনি স্বীকার করলেও লিখিত কোন অভিযোগ পাওয়া পাননি বলে দাবি করেন। বহিস্কারের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে সেগুলোর সম্পৃক্ততা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাউজান সরকারি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, আমি চট্টগ্রাম আদালতে ছিলাম। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছি।
Leave a Reply