দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে মা মাছ শিকার। এখন হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম। এই নদীতে মেজরকার্প জাতীয় মাছ-রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ প্রতি বছরের এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যেই ডিম ছাড়ে।এখন নদীর সংযুক্ত খালে অবস্থানকারী মা মাছ গুলো হালদা নদীতে ডিম ছাড়তে অবস্থান করছেন।
হালদায় বেড়েছে মা মাছের আনাগোনা। বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল সৃষ্টি হলে নদীতে মা মাছ প্রথমে নমুনা ডিম, পরে পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়বে। কখন ডিম ছাড়বে মা মাছেরা এ অপেক্ষায় নদীতে কযেক’শ ডিম সংগ্রহকারীরা, তাদের সরঞ্জাম নৌকা, জাল, বালতি নিয়ে অবস্থান করছেন। এমন সময় হালদা নদীতে হাত জাল ও বড়শী দিয়ে মা মাছ শিকারে মরিয়া হয়ে উঠেন অসাধু শিকারীরা। এতে হুমকির মূখে পড়ছে মা মাছেরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, হলদা অংশে উরকিরচর, মদুনাঘাট, মাদার্শা, কাগতিয়া, পশ্চিম গহিরা, কোতোয়ালি ঘোনা, নোয়াজিষপুর ঈন্দারঘাট এলাকাসহ হালদার কয়েকটি স্থানে হাত জাল ও বড়শী শিকার করা হচ্ছে।রোববার বিকালে হালদা নদীতে একটি কাতলা মা মাছ মরে ভেসে উঠেছে। মাছটি নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকায় মাছটি ভেসে ওঠলরে স্থানীয় মৎস্যজীবিরা উদ্ধার করে। মাছটির ওজন প্রায় ৫ কেজি বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। এসময় হালদা নদীতে মাছ শিকার ও মা মাছ মরে ভেসে ওঠা দুঃখজনক।
রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন বলেন, মাছটির মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারালো কিছু দিয়ে এটির মাথায় আঘাত করা হয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদন করে মাছটি মাটিচাপা দেওয়া হয়। এদিকে গত এক মাস থেকে হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে চলছে। এরমধ্যে থেমে নেই মা মাছ শিকার করা।
জানা যায়, গত সাত রাউজান উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য কর্মকর্তা ও নৌ-পুলিশ হালদা নদীতে ৫৮টি অভিযানে ৬৫ হাজার ২০০ মিটার জাল উদ্ধার করে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করেছে। আনুমানিক মূল্য ২০লাখ ৬০ হাজার টাকার জাল। নদী থেকে মাছ শিকার করার অপরাধে ৮ জন ব্যক্তিকে ১লাখ ১৭ হাজার টাকা অর্থদণ্ড জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল উদ্ধার ও জরিমানা করলেও ঘেরজাল, বড়শী ও হাত জাল দিয়ে চলছে মাছ শিকার। বড়শীর আঘাতে মরে ভেসে উঠেছে মা মাছ। ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, হালদা নদীর মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদীতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রজনন মৌসুমের প্রায় এক মাস পার হয়ে গেলেও এখনো নমুনা ডিম ছাড়েনি মা মাছেরা। এর মধ্যে মা মাছের মরে ভেসে ওঠা এটি দু:খজনক। হালদা বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি মা মাছ শিকার মানে শুধু একটি মাছ শিকার নয়। প্রজননকালে একটি মা মাছের পেটে মাছটির বয়স, ওজন ও আকৃতি অনুসারে সাধারণত ৩ লাখ থেকে ৩৫ লাখের মতো ডিম থাকে। হিসাব করে দেখা গেছে, একটি মাছ থেকে যে সংখ্যায় ডিম পাওয়া যায়, আর সেই ডিম থেকে যে মাছ হয়, টাকার অঙ্কে তার পরিমাণ কমবেশি চার কোটি! এ হিসাবে বলা যায়, একটি পরিপূর্ণ মা মাছ শিকারের ফলে চার কোটি টাকার ক্ষতি হয়।হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে হালদায় চলছে কার্পজাতীয় মা মাছের ভরা প্রজনন মৌসুম। এই প্রজনন মৌসুমে হালদা নদী থেকে একটি মৃত কাতলা মা মাছ উদ্ধার করা খুবই দূ:খজনক। কার্পজাতীয় মা মাছ যেন নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারে তাই মা মাছ রক্ষা, ইঞ্জিনচালিত নৌযান বন্ধ ও দূষণের থেকে হালদা নদীর জলজ বাস্তুতন্ত্রকে স্বাভাবিক রাখতে হালদা ও তার শাখাখাল গুলোতে প্রশাসনিকভাবে নিয়মিত অভিযান ও স্থানীয়ভাবে নজরদারী বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশ অনুকুলে থাকলে অর্থাৎ বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢল নেমে আসলে চলতি মাসের পূর্ণিমার জোঁ’তে (১০ মে- ১৪ মে) না হয় অমাবস্যার জোঁ’তে (২৫ মে- ২৯ মে) হালদা নদীতে মেজর কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Leave a Reply