আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের মহাসচিব ও ফটিকছড়ি ছৈয়দ বাড়ী দরবার শরিফের সাজ্জাদানশীন পীরে ত্বরিকত আওলাদে রাসুল আলহাজ্জ আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ মসিহুদোলাহ(মা.জি.আ)বলেছেন আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রাহঃ) অপরিমেয় প্রতিভাধর একজন সাধারণ বেশ-ভূষার অসাধারণ এক আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ ছিলেন যিনি সারা জীবন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রেম ধারণ করেছেন,ধর্মানূভুতি জাগরণের মাধ্যমে মুসলিম জাতিকে একাত্ম হবার পথ দেখিয়েছেন।সৈয়দ মুহাম্মদ মসিহুদোলাহ আরো বলেন আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ(রহঃ) ছিলেন আহলে সুন্নত ওয়াল জমা’আতের একনিষ্ঠ সেবক, হানাফী মাযহাবের অনুসারী, ক্বাদিরীয়া ত্বরীকার সফল প্রচারক, সুন্নত-ই রাসুলের জীবন্ত কায়া, যুগের মুজাদ্দিদ (সংস্কারক) এবং অসহায় সুন্নী মুসলিম জনতার দিশারী। তিনি আরো বলেন তৈয়ব শাহ(রহঃ) ৭০ দশকে বাংলার জমীনে যে জশনে জুলুছ প্রবর্তন করেছেন সেটি এখন জামেয়া-আঞ্জুমানে সীমাবদ্ব নয় সেটি এখন বিশ্বের সর্ববৃহত্তম জুলুছ।তিনি বলেন শাহেনশাহে সিরিকোট হযরত ছৈয়দ আহমদ শাহ (রহঃ)মাদ্রাসা প্রতিষ্টা করে ঈমানী খেদমত করেছেন।আর এ ধারাবাহিকতায় আঞ্জুমান পরিচালনাধীন সারা দেশের কয়েকশ মাদ্রাসার মাধ্যমে সাচ্ছা আলেম তৈয়ার হচ্ছে।পঞ্চগরে গেলাম দেখি এয়া নবী সালাম আলাইকার আওয়াজ,জিজ্ঞিস করলাম কোন মাদ্রাসায় পড়েছ,বলেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া,মন ভরে গেল আলহামদুলিল্লাহ।তিনি উল্লেখ করেন শাহেনশাহে সিরিকোটির মত কোন দরবার বা পীর এত মাদ্রাসা প্রতিষ্টা করেননি।তিনি ১২ রবিউল আওয়ালের জশনে জুলুছকে বাতিলদের বিরুদ্বে আমাদের একমাত্র সংগ্রাম উল্লেখ করে বলেন জামেয়া আহমদিয়ার বিশ্ব জুলুছে যোগদান করে নারায়ে তাকবির,নারায়ে রেছালতের স্লোগানকে আমাদের অন্তরে ধারন করে ঈমান আকিদা মজবুত করতে হবে।কারন ১২রবিউল আওয়ালের জুলুছের দিন বাতিলদের অন্তর চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়।আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর ভক্ত-অনুরক্তদের মাঝে লুকিয়ে থাকা সে ইশক্বকে উদ্দীপ্ত করতে তাঁর আব্বজান কর্তৃক প্রচারিত সিলসিলায়ে কাদেরিয়া আলীয়ায় প্রচলিত খতম-এ গাউছিয়া আদায় পদ্ধতি নতুনরূপে বিন্যাস করেন। হামদ-না‘ত, কাসীদা-দুরূদ পরিবেশন সংযোজন করেন এবং শায়খগণের নামের তালিকা তথা শাজরাকে ছন্দোবদ্ধ চিত্তার্কষক করে প্রণয়ন করেন। কারণ সুমধুর এবং ছন্দযুক্ত সুর শ্রবণে ও পাঠে মানব হৃদয়ে যে অনির্বচনীয় অনুভূতি সৃষ্টি হয়, তা নিঃসন্দেহে অপ্রতিরুদ্ধ হয়। এ জন্য দেখা গেছে – এ অঞ্চলে প্রতিটি ঘরে ঘরে, পাড়ায়-মহল্লায় তাঁর নির্দেশিত খতম-এ গাউছিয়া শরীফ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। ফলে প্রত্যেক আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার মুখে অশালীন গানের পরিবর্তে নবী-অলিগণের প্রশস্তি লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই এ গাউছিয়া ও শাজরা শরীফ শ্রবণে হিদায়তপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের মন-মগজে জাগরিত হয়েছে র্ধমীয় অনুভূতি। ইবাদত-বন্দেগী তাদের নিত্যসঙ্গীর রূপ লাভ করেছে।শরীয়ত-ত্বরীকতের এ দিকপাল সরলমনা সাধারণ মুসলমানদের মনে খতম-এ গাউছিয়া শরীফের মাধ্যমে ইশক্ব-ই রাসূলের যে মশাল প্রজ্জলিত করেন, সে প্রেমানলকে আরো আন্দোলিত করতে তিনি এ দেশে প্রবর্তন করেন ৯ ও ১২ রবিউল আউয়াল জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং ইসলামের সঠিক রূপরেখা আহলে সুন্নত ওয়াল জমা’আতের সাথে তাদের পরিচয় করে দিতে তিনি আযানের আগে সালাত ও সালাম পাঠ প্রচলন করেন। তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রতিষ্ঠা করেন গাউসিয়া কমিঠি বাংলাদেশ। শরিয়ত ও তরিকত বিষয়ে জ্ঞাণভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার উদ্দেশ্যে তরজুমান-এ আহলে সুন্নত ওয়াল জমা’আত নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশেরও ব্যবস্থা করেন তিনি। পাশাপাশি এ সবের স্থায়ী ব্যবস্থা করতে গড়ে তোলেন অসংখ্য দ্বীনি শিক্ষা কেন্দ্র মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকাহ। তাঁরই অক্লান্ত পরিশ্রমে এ অঞ্চলের সুন্নী মুসলিম জনতার মুখে আজ অহরহ শোভা বর্ধন করছে পবিত্র কুর’আনের আয়াত, হামদ, না’ত এবং মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল(দ.), অলি-বুর্যগদের স্তুতি-গুণর্কীতন। সদা-সর্বদা তাঁর মাঝে বিরাজ করত এক ধরনের স্নিগ্ধ, শান্ত, মায়াবী ও নূরাণী আভা। এ জন্য তাঁর সান্নিধ্য প্রাপ্ত সকলকেই বলতে শুনা যায়, “তিনি আমাকেই বেশী ভালবাসতেন”। এ নিয়ে তাদের গর্ববোধের অন্ত নেই। কিন্তু যখনই নবী-অলির মান-মর্যাদা সম্পর্কে সামান্যতম অসঙ্গতিপূর্ণ একটি শব্দও শুনতেন, তৎক্ষণাৎ সকল প্রতিকূলতার মাঝেও প্রতিবাদ করতেন, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতেন এবং দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতেন।তিনি ছিলেন যুগের শ্রেষ্ঠ বিদ্বান,বাগ্মী, যুক্তিবিদ ও চিন্তাবিদ। প্রত্যেহ তিনি ফজর নামাজের পর বক্তব্য পেশ করতেন। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা অনেক আলিম তাঁর মজলিশে ভিড় জমাতেন এবং বসতে পেরে উৎফুল্ল¬ ও পরিতৃপ্ত হতেন। অনেকে আবার তাঁর মুরীদও হয়ে যান। তিনি অসংখ্য মাদ্রাসা ও দ্বীনি শিক্ষার্থীদেরকে সংগোপনে আর্থিক সাহায্য করতেন। তাই তারা তাঁকে একজন দানশীল ব্যক্তি হিসেবে জানতেন এবং সপ্তাহ/মাসান্তে তাঁর নিকট চলে আসতেন।
বাস্তবিকপক্ষে, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি দৃঢ় আস্থাই ছিল তাঁর ভিত্, ইশক্বে রাসুল ছিল তাঁর প্রেরণা, সুন্নাত ছিল তাঁর দৈনন্দিন কার্য প্রণালী, উস্ওয়া-ই হাসানা ছিল তাঁর মডেল, শরীয়ত-ত্বরীকত ছিল তাঁর মজলিসের উৎস, দয়া ছিল তাঁর পরশ এবং আউলিয়া-ওলামা, ফকীর-মিসকীন ছিলেন তাঁর সহচর। তাঁর প্রবর্তিত সকল কর্মসূচি এখনও পর্যন্ত এ সবের সাক্ষ্য-প্রমাণ বহন করে আছে। তিনি ছিলেন রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ৩৯তম বংশধর। সেজন্য ওয়ারিশ সূত্রে দ্বীন-ই ইসলামের তাবলীগের যে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন, তা পালনে তিনি প্রাণপন সচেষ্ট ছিলেন। সারাক্ষণ কর্ম ব্যস্ততার মাঝে তিনি ডুবে থাকতেন। দ্বীন ইসলামের তাবলীগের জন্য তিনি দিবা-নিশি কখনো এ জায়গায় আবার কখনো অন্য জায়গায় ছুটে যেতেন। তারপরও ইবাদত রিয়াজত হতে পিছপা ছিলেন না, বরং যখন সফর সঙ্গীরা ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহ-মনে গভীর নিদ্রাচ বরং যখন সফর সঙ্গীরা ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহ-মনে গভীর নিদ্রাচ্ছন্ন থাকতেন,তখন তিনি নিজ কক্ষে নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে নিবৃত্তে একাকী ইবাদতে মশগুল থাকতেন। যখন তাঁর বিশ্রামের প্রয়োজন হত, তখন তিনি মেঝেতে ক্বিবলামুখী হয়ে শুয়ে পড়তেন আর তাঁর মাথাটি স্বীয় ডান হাতের কনুইতে ভর দিয়ে তিন আঙ্গুলের উপর রাখতেন।আলহাজ্জ আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ মসিহুদোলাহ(মা.জি.আ)গত ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ ফটিকছড়ি দক্ষিণ উপজেলার ব্যবস্থাপনায় পবিত্র শোহাদায়ে কারবালা ও হুজুর কেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ(রহঃ) ওরছ মোবারক উপলক্ষে আয়োজিত বিশাল মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।আজাদী বাজারস্থ হক স্কয়ারে আয়োজিত মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ ফটিকছড়ি দক্ষিণ উপজেলা শাখার সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাস্টার মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন।গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ ফটিকছড়ি দক্ষিণ উপজেলা শাখার সেক্রেটারী আল্লামা ফজলুল বারী আল-কাদেরীর সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক ছিলেন গাউছিয়া কমিটির ফটিকছড়ি দক্ষিণ উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি উপাধ্যক্ষ আলহাজ্জ আল্লামা মুফতি জসিম উদ্দিন আলকাদেরী।সম্মানিত অতিথি ছিলেন সাবেক উপাধ্যক্ষ আলহাজ্জ আল্লামা আবদুস শাকুর আনসারী।উদ্বোধক ছিলেন গাউছিয়া কমিটি উত্তর জেলার সহ-সভাপতি আলহাজ্জ মোঃ হারুন সওদাগর।শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আলহাজ্জ আবু আহমদ সওদাগর।বিশেষ অতিথি ছিলেন মাস্টার মোঃ খোরশেদুল আলম,অধ্যক্ষ মোঃ জামাল উদ্দিন,অধ্যাপক মোঃ গিয়াস উদ্দিন,আলহাজ্জ আল্লামা মুফতি আবু তাহের কাদেরী।আলোচক ছিলেন আলহাজ্জ আল্লামা ইসমাইল আল কাদেরী,আলহাজ্জ আল্লামা আবদুল্লাহ আল মাসউদ কাদেরী,মাস্টার মোঃ উসমান খাঁ,আলহাজ্জ মাওলানা সিরাজুল মোস্তফা কাদেরী।কৃতজ্ঞতা বক্তব্য দেন মাহফিলের আহবায়ক আলহাজ্জ মুহাম্মদ ইউসুফ বাবুল ও সচিব মোহাম্মদ দিদারুল আলম মুন্না।এর আগে বিকালে পবিত্র খতমে কোরআন,মোজমোয়ায়ে সালাওয়াতে রাসুল,খতমে গাউছিয়া পরিচালনা করেন অর্ধ শতাদিক আলেম উলামা।সর্বশেষ মিলাদ কিয়াম পরিবেশন করেন মাওলানা শফিউল আজম।আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন আলহাজ্জ আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ মসিহুদোলাহ(মা.জি.আ)।এরপর সকলের মাঝে তাবরুক বিতরণ করা হয়।
Leave a Reply