যীশু সেন :
রাউজানের উত্তর গুজরায় অবস্থিত ১৩৩ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী সেনবাড়ি জাগৃতি সংঘের সর্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজা এবারও উদ্দীপনা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও সাংস্কৃতিক আয়োজনে পরিপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়েছে। মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় সেনবাড়ি রাধামাধব দুর্গা মন্দির প্রাঙ্গণে। প্রতিদিনের নিত্য পূজা, ঢাকের তালে আরতি, জাগরণ পুঁথি পাঠ , চণ্ডীপাঠ, ভোগ আরতি, সংগীতাঞ্জলি, শাস্ত্রীয় আলাপ কীর্তনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এক উজ্জ্বল সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।পূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল প্রতিদিনের চণ্ডীপাঠ, যা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও ভক্তির সঙ্গে পরিচালনা করেন লায়ন কৈলাশ বিহারী সেন। পূজা পরিচালনার গুরুদায়িত্বে ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষক রটন্তী চক্রবর্তী, প্রদীপ চক্রবর্তী ও প্রকৌশলী সুমন সেন। পূজার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সেনবাড়ি জাগৃতি সংঘের সর্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল সেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন রাসবিহারী সেন (সিকো), সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন পংকজ সেন এবং অর্থসম্পাদক ছিলেন রানা সেন।
দুর্গাপূজার শেষ দিন বিজয়া দশমীতে অনুষ্ঠিত হয় পুনর্মিলন অনুষ্ঠান, যা ছিল শাস্ত্রীয় আলাপ কীর্তনের মাধ্যমে সমাপ্তির এক অনন্য পরিবেশনা। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের শিল্পী এবং বিশিষ্ট কবিয়াল ডা. কংসরাজ দত্ত ও বিশিষ্ট কবিয়াল দিলীপ সরকার। সহযোগী ছিলেন কবিয়াল ঝুলন আচার্য। শাস্ত্রীয় আলাপ সংকীর্তন পরিচালনায় ছিলেন জাগৃতি সংঘের উপদেষ্টা কানু সেন।
পূজার সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন- টকন সেন, বুলবুল সেন, রতন সেন, বিকাশ সেন, দোলন সেন, প্রণব সেন, লিটন সেন, তাপস সেন, সুজিত সেন, যীশু সেনসহ অনেকে, যাঁদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা এই দুর্গোৎসবকে সফল করে তোলে।আয়োজনে ছিল প্রতিদিন অন্নপ্রসাদ বিতরণ, সংগীতাঞ্জলি, মায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সকল বয়সী মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পূজামণ্ডপটি রূপ নেয় এক মিলনমেলায়। ধর্মীয় আয়োজনের পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনকে দৃঢ় করার এ উদ্যোগ সবার মাঝে একতা, সম্প্রীতি ও আনন্দের বার্তা পৌঁছে দেয়।রাউজানের উত্তর গুজরা সেনবাড়ির এই দুর্গাপূজা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি দীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই ঐতিহ্যকে ধারণ করে চলেছে সেনবাড়ির উত্তরসূরীরা। এই আয়োজন শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য নয়, বরং এটি এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনজীবনের।
Leave a Reply