দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়েছে। রোববার (১৮ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে বারটার দিকে ডিম ছাড়া শুরু করে মা মাছ। ১৯ জুন সোমবার সকাল ৯টা পষর্ন্ত সংগ্রহকারীরা নদীতে জাল পেতে ডিম সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। এর আগে গত শনিবার বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ি ঢল নেমে আসে হালদা নদীর কয়েকটি পয়েন্টে। তখন সামান্য পরিমাণ নমুনা ডিম পেয়েছিল মৎস্যজিবীরা। বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার পর থেকে নদীতে নৌকা-বাঁশের ভেলা ও জাল নিয়ে অপেক্ষায় ছিল সংগ্রহকারীরা। অবশেষে মধ্যরাতে ডিম ছাড়লে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেছেন দু’পাড়ে শতাধিক মৎস্যজিবী। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমবশ্যার জো’র মধ্যে গত ১৫ জুন থেকে কয়েক দফা বৃষ্টিপাতের পর বোরবার নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ১৮ জুন মধ্যরাতে জোয়ারের সময় আমতুয়া পয়েন্টে কার্পজাতীয় মা মাছ পূরোদমে ডিম ছাড়ে। জোয়ার বাড়ার সাথে সাথে নাপিতের ঘাট, আজিমারঘাট, মাছুয়াঘোনা, হ্যাচারী সংলগ্ন, পুরালি স্লুইজ গেইট, নোয়াহাট সহ হালদার বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডে এই ডিম ছড়িয়ে পড়ে’। অপরদিকে ডিম ছাড়ার পর তিন শতাধিক নৌকা হালদা নদীর আজিমের ঘাট, নতুনহাট, আমতুয়া, মাছুয়াঘোনা, রামদাস মুন্সীর হাট, নাপিতের ঘাট, সোনাইর মুখ, গড়দুয়ারা, অংকুরি ঘোনাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে মা মাছের ডিম সংগ্রহ করেছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত চলে ডিম সংগ্রহের উৎসব। রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পীযুষ প্রভা কর জানান, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা রাতভর ডিম সংগ্রহ উৎসবে নানা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারী হ্যাচারী গুলোতে ডিম ফুটানোর জন্য প্রস্তুত করে দেয়া হয়েছে। হ্যাচারীতে থাকা কূয়া গুলোতে সংগ্রহ করা ডিম ফুটানোর জন্য সংগ্রহরীরা প্রস্তুতি নিয়েছে। যেই কোন সময়ের চেয়ে এ বছর সর্বাধিক ডিম সংগ্রহ করেছে মৎস্যজীবিরা। তিনি আরো জানান, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছে। ডিম সংগ্রহকারী রোসাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষা পর নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে পুরোদমে। আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেছি। বাদল বড়–য়া বলেন, আশানুরুপ ডিম সংগ্রহ করে আমি আনন্দিত। মোহাম্মদ মুছা বলেন, আমি এ বার ১২ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি। গত বছর করেছিলাম মাত্র ৪ বালতি। বেনু মধাব জলদাশ বলেন, তিনটি নৌকা নিয়ে ছয়জন মিলে ২৩ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি। কামাল সওদাগর সহ কয়েকজন ডিম সংগ্রহকারী জানান, হালদা নদীতে গত কয়েক বছর মা মাছ ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ না পাওয়ায় পর্যাপ্ত ডিম ছাড়েনি। এ বছর ঘুড়ে দাঁড়িছে হালদা নদী। উৎসব মূখর পরিবেশে পর্যাপ্ত ডিম সংগ্রহ করেছে মৎস্যজীবিরা। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে হালদা নদী থেকে ২২ হাজার ৩১৪ কেজি, ২০০৮ সালে ২ হাজার ৪০০ কেজি, ২০০৯ সালে ১৩ হাজার ২০০ কেজি, ২০১০ সালে ৯ হাজার কেজি, ২০১১ সালে ১২ হাজার ৬০০ কেজি, ২০১২ সালে ২১ হাজার ২৪০ কেজি, ২০১৩ সালে ৪ হাজার ২০০ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ কেজি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৯ সালে ৭ হাজার কেজি, ২০২১ সালে ৮ হাজর ৫০০ কেজি ও ২০২২ সালে ৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল।
Leave a Reply