যীশু সেন :
প্রতি বছর ২১শে জুন বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব সংগীত দিবস। এই বিশেষ দিনটি সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, এর গুরুত্ব উপলব্ধি এবং সংগীতের মাধ্যমে মানুষকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে উদযাপিত হয়। সংগীত শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি আত্মার খোরাক, মনের পরিশুদ্ধি এবং সমাজে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধির এক শক্তিশালী হাতিয়ার।
সংগীত মানুষের আবেগ প্রকাশের এক অনন্য মাধ্যম। সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ, আনন্দ-বেদনা—সব অনুভবেই সঙ্গী হতে পারে সংগীত। শিশুকাল থেকেই মানুষ গান শেখে, সংগীত শুনে অনুভব শেখে, আবেগের প্রকাশ শেখে। শিশুদের মানসিক বিকাশ, শিক্ষার্থীদের একাগ্রতা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক শান্তি লাভে সংগীতের প্রভাব অপরিসীম। এমনকি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও সংগীত থেরাপির ব্যবহার দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।এই মহামূল্যবান শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সংগীত শিক্ষক ও শিল্পীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাঁদের নিরলস পরিশ্রমেই নতুন প্রজন্ম সংগীত শিক্ষা লাভ করছে,সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা পাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলা সংগীতের পরিচয় ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, অনেক সংগীত শিক্ষক ও শিল্পী তাঁদের প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে সরকারিভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।যেমন—সংগীত শিক্ষকদের জন্য নির্দিষ্ট ও সম্মানজনক বেতন কাঠামো নির্ধারণ,বয়ঃবৃদ্ধ শিল্পীদের জন্য পেনশন ও আর্থিক সহায়তা,সংগীতচর্চার জন্য সরকারি অনুদান প্রদান,সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রসারণ,জাতীয় পর্যায়ে সংগীতশিল্পীদের পুরস্কার ও স্বীকৃতি প্রদান, এছাড়াও স্থানীয় ও জাতীয় উৎসবগুলোতে সংগীতশিল্পীদের নিয়মিত অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাঁদের অবদান গণমাধ্যমে তুলে ধরা অত্যন্ত প্রয়োজন।সংগীতের শক্তিকে সম্মান জানাতে হলে এর বাহকদের—অর্থাৎ সংগীত শিক্ষক ও শিল্পীদেরও যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে। বিশ্ব সংগীত দিবস আমাদের এই উপলব্ধি করিয়ে দেয় যে, সংগীত শুধু আনন্দের উৎস নয়, এটি একটি জাতির আত্মার প্রতিচ্ছবি। তাই সংগীতচর্চা ও শিল্পীদের প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত করা আমাদের সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব।
Leave a Reply