গোয়াল ঘরে গরু বেঁধে শুয়ে পড়েছিলেন রেহেনা বেগম। ফজরের নামাজ পড়ে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখেন গোয়াল ঘরে গরু নেই। হাউমাউ করে কেদেঁ ঘুমন্ত ছেলেদের ও প্রতিবেশিদের ডেকে তোলেন তিনি। সবাই মিলে দিকবিদিক চারপাশ খুঁজতে থাকেন গরুটিকে। কিন্তু গরুর খোঁজ মেলেনি। গত ৩১ মে শুক্রবার রাতে গরুর সন্ধান মেলে পাশ^বর্তী কাউখালী উপজেলার বালু খালি এলাকায়। স্থানীয় লোকজন গরুসহ দুই চোরকে আটক করে। পরে আটককৃত দুই চোরের স্বীকারোক্তি মতে ধরা পড়ে রেহেনা বেগমের সতীতের ছেলে মোহাম্মদ মনির হোসেনের। সেই ছিল গরু চুরির মূলহোতা। তার সাথে রয়েছে আরো ৫/৬ জনের একটি চোরে দল। ১ জুন সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য আজাদ হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন আটক তিন গরু চোরকে হাজির করান রাউজান উপজেলা ডাবুয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডস্থ হিঙ্গলা টেক্সী ষ্টেশান এলাকায়। খবর পেয়ে মুহুর্তে জড়ো হয় স্থানীয় কয়েক’শ লোকজন। একই সাথে হাজির হয় ১৫/২০ জন চুরি হওয়া গরুর গিরস্থ। যাদের গত একমাস ধরে অন্তত ২০টি গরু চুরি হয়েছে। আটক দুই চোরের বাড়ি একই ইউনিয়নের পাশর্^বর্তী ৭নং ওয়ার্ডের আরব নগর এলাকা আবদুর রাজ্জাকের পুত্র ওয়াছুর জামান (২৪) ও আবদুল মান্নানের পুত্র মোহাম্মদ মোবিন। ৮নং ওয়ার্ডের দুই চোর আটকের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ইউপি সদস্য আসাদ হোসেন। তিন চোর, দুই জনপ্রতিনিধি ও কয়েক’শ উত্তেজিত লোক মিলে শুরু হয় সেখানে বাগবিত-া। কথা কাটাকাটিতে উঠে আসে তিন গরু চোর স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সমর্থক। এক পর্যায়ে উত্তেজিত তিন চোরকে দেওয়া হয় হালকা পাতলা পিঠুনি। এরিমধ্যে পুলিশ ভ্যান নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় রাউজান থানা পুলিশের একটি দল। তারা তিন চোরকে থানায় নিয়ে যেতে চাইলে উপস্থিত দুই ইউপি সদস্য পুলিশকে অপেক্ষা করতে বলেন। তখন চোর কোন পক্ষের সেইটা নিয়ে ত্রি-পক্ষিয় বাগবিগ-া চলতে থাকে। পুলিশ কিছুক্ষণ দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। পুলিশ উত্তেজিত জনতার অবস্থা দেখে তিন চোরকে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ ভ্যানের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। এসময় উত্তেজিত জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে তিন চোরকে গণপিঠুনি দিতে থাকে। পুলিশ জনতাকে আশ^াস দেন গরু চোরের বিচার হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। আসামীদের থানায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিন। এরপর চোরদের ভ্যানে তোলা হয়। কয়েকজন উত্তেজিত লোক পুলিশের গাড়িতে উঠে তিন চোরকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। জনতার অধিকাংশ লোক গাড়ি গতিরোধ করে রাখে। পুলিশের সামনে গণপিঠুনি দিতে থাকে চোরদের। এসময় একজন পুলিশ আহত হয়েছে। পরে উপস্থিত দুই ইউপি সদস্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় জনতাকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ করে পুলিশের গাড়ি স্থান ত্যাগ করার সুযোগ করে দেয়। গরুর মালিক রেহেনা বেগম বলেন, চুরি হওয়া গরুসহ চোর ধরা পড়লে গরুটি উদ্ধার হয়। স্থানীয় লোকজন আমার গরুটি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি চোরের শাস্তির দাবি করছি। আবুল কাশেম নামে এক ব্যক্তি বলেন, গত সাপ্তাহে আমার দুইটি গরু চুরি হয়েছে। হিঙ্গলা এলাকা থেকে এ পযর্ন্ত ২০টি গরু চুরি হয়েছে। পুলিশের ডিএসপি এ এস আই জাহাঙ্গীর আলম জানান, গণপিঠুনিতে আহত তিন চোরকে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রাউজান থানার অফিসার ইনচার্স জাহিদ হোসেন বলেন, গরুর মালিক মামলা দায়ের করলে আটক চোরদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।
Leave a Reply