চীনের ঝুহাই বন্দর থেকে গত ১ জুন রওনা হয়ে সাউথ চায়না সি, মালাক্কা স্টেট এবং বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৬জুন) দুপুর ৩টার দিকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক দুটি টাগবোট চট্টগ্রাম বন্দরের ১ নম্বর গেট সংলগ্ন সার্ভিস জেটিতে এসে পৌঁছায়।এরই সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের নৌ বিহারে যুক্ত হল কাণ্ডারি-৩ ও কাণ্ডারি-৪ নামে এই দুটি টাগবোট।
টাগবোট দুটি জেটিতে বার্থিং নেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান, চিওয় লি শিপইয়ার্ডস লিমিটেডের লোকাল এজেন্ট ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান তরফদার মো. রুহুল আমিন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক সহ বন্দরের সকল বিভাগীয় প্রধান, উপ-বিভাগীয় প্রধানগণ।
টাগবোট দুটি উদ্ভোদন কালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, দেশের নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বহিবিশ্বের সাথে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ এবং কন্টেইনারে পণ্য পরিবহনে ৯৮ শতাংশ এ বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। ৬৩০০ বিএইচপি/ ৭৫ টন বোলার্ড পুলের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন নতুন টাগবোট দুটি আধুনিক প্রযুক্তির এএসডি টাগ অর্থাৎ টাগবোট গুলো একই স্থানে 360° ঘুরে যেতে সক্ষম। একারণে টাগগুলো অধিক দক্ষতার সাথে বড় বাণিজ্যিক জাহাজসমূহকে বন্দরে অভ্যন্তরে ও বাহিরে আনা নেওয়া, পুলিং, পুশিং ইত্যাদি কাজে সাহায্য করতে পারবে। এতে শক্তিশালী অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রয়েছে যার মাধ্যমে প্রায় ১২০ মিটার দূর থেকেও দক্ষতার সাথে পানি এবং ফোমের মাধ্যমে যেকোনো আগুন নিভাতে সক্ষম। এছাড়াও নদীতে তৈল দূষণ হলে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছিটিয়ে দূষণ মোকাবেলা করতে পারবে। টাগ দুটিতে আধুনিক রাডার, জিপিএস, ইকো সাউন্ডার, অটো পাইলট, ইউএমএস, বেতার ও স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়াতেও টাগবোটগুলো চলতে সক্ষম। বাস্তবায়নাধীন বে-টার্মিনাল এবং মহেশখালী মাতারবাড়ি টার্মিনালে বড় ড্রাফটের জাহাজের অপারেশনাল কাজে সহায়তা, চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জাহাজগুলোকে সহায়তা প্রদান করা, কর্ণফুলী চ্যানেলের নৌ-সংরক্ষণে সহায়তা প্রদান করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে।
চিওয় লি শিপইয়ার্ডস লিমিটেডের লোকাল এজেন্ট ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, টাগবোট দুটি চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহৃত অন্যান্য টাগ থেকেও অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন এবং আধুনিক। এই শিপ ইয়ার্ডে নির্মিত একই ধরনের টাগ সিঙ্গাপুর পোর্ট, সুয়েজ খাল. ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের বিখ্যাতসব বন্দরে ব্যবহৃত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ইমার্জেন্সি প্রয়োজনের নিমিত্তে আমরা সময়মত টাগবোট দুটিকে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসতে পেরেছি বলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
উল্লেখ্য, টাগ দুটি চায়নার হংকংয়ে অবস্থিত চিওয় লি শিপইয়ার্ডস লিমিটেডের ইয়ার্ডে নির্মিত। টাগবোট দুটি সংগ্রহের লক্ষ্যে ১৪৫ কোটি ২২ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষ ও চিওয় লি শিপইয়ার্ডস লিমিটেডের হংকং এর মধ্যে চুক্তি সাক্ষর হয়। চুক্তি মোতাবেক এবছরই জুন মাসে টাগবোট দুটি হস্তান্তরের কথা উল্লেখ ছিল। যা বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতেই অবস্থান করছে। বিগত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসা যাওয়ার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্যিক জাহাজসমূহকে বন্দরের জেটিতে নিরাপদে ভেড়ানো এবং জেটি ছেড়ে যাওয়ার সময়ে টাগবোটের ব্যবহার করতে হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে সাধারণ প্রযুক্তির প্রায় ৮টি টাগবোট রয়েছে। বন্দরের বিদ্যমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আধুনিক ও অধিক শক্তিশালী টাগবোটের প্রয়োজন বিবেচনায় এই টাগবোট দুটি সংগ্রহ করা হয়। নতুন আধুনিক টাগবোট চট্টগ্রাম বন্দরের নৌবহরে যুক্ত হওয়ায় একদিকে যেমন বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে তেমনিভাবে বন্দরের সুনামও অনেকাংশেই বৃদ্ধি পাবে।
Leave a Reply