চট্টগ্রামের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীর শাখা খাল কাটাখালী থেকে ৩৭ কেজি ওজনের একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার বিকেল ৫ পাঁচটার দিকে হাটহাজারী উপজেলার দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়নের মদুনাঘাট বাজারের কাটাখালী খালে ভাসমান অবস্থায় এই ডলফিনটি উদ্ধার করা হয়।ডলফিনটিতে পচন ধরায় প্রাথমিক সুরতহাল করে মাটি চাপা দেয় হয় হালদার রামদাশ মুন্সিরহাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ও নদীর স্বেচ্ছাসেবকেরা।গত ৬ মাসের ব্যবধানে এ নিয়ে ৩টি মৃত ডলফিন হালদা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরি সেন্টার।জানা যায়,সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়নের মদুনাঘাট বাজারের কাটাখালী খালের পাড়ে থেকে ৩৭ কেজি ওজনের একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়।হালদা নৌ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ রমজান আলী বলেন, উদ্ধার হওয়া ডলফিনটি কয়েক দিন আগে মারা গেছে। এটির শরীরে পচন ধরেছে। শরীরের চামড়া ফুলে উঠেছে। তাই ময়নাতদন্ত না করে মাটি চাপা দেওয়া হয়। এটির শরীরে আঘাতের তেমন কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। নদীর দূষণ এবং মাছ ধরতে নদীতে বিষ দেওয়ার কারণেও মৃত্যু ঘটতে পারে ডলফিনটির।স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, কাটাখালী খাল হয়ে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন কারখানার শত শত টন বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি হালদা নদীতে মিশে যায়। সেই খালের পানি কোনো প্রকার দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা যায় না। ডলফিনটি জোয়ারের সময় খালে ঢুকে পড়ে বিষাক্ত বর্জ্যের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।উদ্ধারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলফিনটির ওজন প্রায় ৩৭ কেজি। দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তিন ফুট। এর আগে সর্বশেষ গত ৫ ফেব্রুয়ারি নদীর রাউজান অংশের বিনাজুরী এলাকায় আরেকটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। এর সাত দিন পর ১২ ফেব্রুয়ারি একই উপজেলার উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের কাগতিয়া খালের মজিদা পাড়া থেকে খালে ভাসমান অবস্থায় একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। এর দুই মাস আগে গত ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর ওই স্থানের দুই কিলোমিটার দূরে আজিমের ঘাট এলাকায় ১৩ কেজি ওজনের আরেকটি মৃত ডলফিন শাবক উদ্ধার হয়েছিল। এ নিয়ে গত সাড়ে ছয় বছরে হালদা থেকে ৪৮টি মৃত ডলফিন উদ্ধার হলো। দু-একটি ছাড়া প্রায় সব ডলফিনেরই শরীরে আঘাতের চিহ্ন শনাক্ত করেছিল উদ্ধারকারী দল। একাধিক ডলফিনকে হত্যাও করা হয় বলে অভিযোগ। হালদা বিশেষজ্ঞ ড. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকাভুক্ত (অতি বিপন্ন প্রজাতি) হালদার ডলফিন। বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে এই প্রজাতির ডলফিন আছে মাত্র ১ হাজার ১০০টি।এর মধ্যে শুধু হালদাতেই ছিল ১৭০টি। গত সাড়ে পাঁচ বছরে হালদায় ৪৮টি ডলফিন মারা যাওয়ার ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন নদী ও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মনজুরুল কিবরিয়া বলেন,পচন ধরার ময়নাতদন্ত না করে নদীর পাড়ে নৌ পুলিশ এটিকে মাটি চাপা দেয়।
Leave a Reply